শাইখ খালিদ আর-রাশিদ
শাইখ খালিদ আর-রাশিদ—বিগত কয়েক দশকের দাওয়াহর ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম। সৌদি আরবের পূর্ব-প্রদেশের জনবহুল শহর আল-খোবারে ১৯৭০ সালে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। নগরীর আর দশটি ছেলের মতো তিনিও বেড়ে ওঠেন মাঠ ও অলিগলিতে ফুটবলের পেছনে ছোটাছুটি করে। মহল্লার মসজিদে হিফজুল কুরআনের হালাকায় বসতেন। শৈশব থেকেই ফুটবলের প্রতি ছিল তাঁর দুর্নিবার আকর্ষণ।
তাঁর স্বপ্ন ছিল তিনি বড় সামরিক অফিসার হবেন। তাই ক্রিমিনোলজি নিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করার জন্য তিনি আমেরিকা চলে যান। এত কিছুর মাঝেও তিনি ফুটবল ছাড়েননি। পড়াশোনা শেষে তিনি নিজ দেশে ফিরে আসেন এবং ফুটবল খেলতে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। টানা ৬৫ দিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরান। এই সময়গুলোতে তিনি জীবনকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেন। ১৪১২ হিজরির পবিত্র মাহে রমাজান ছিল তাঁর জীবনের যুগসন্ধিক্ষণ। রমাজানের মাঝামাঝি সময়ে মায়ের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় মা তাকে এমন একটি বাক্য বলেন, যা তার জীবনের মোড় পুরোপুরি ঘুরিয়ে দেয়। মা তাকে বলেছিলেন, ‘বেটা আমার, তোর আব্বু বলতেন, “আমার পরিবারের কারও মধ্যে যদি কল্যাণ থাকে, তবে তা খালিদের মাঝেই পাবে।”’ পিতার এই একটি কথা সন্তানের চিন্তাজগৎকে লন্ডভন্ড করে দেয়। আঁধারের প্রাচীর পেরিয়ে তিনি ফিরে আসেন আলোকিত জীবনের রাজপথে। তারপর শুধু এগিয়ে চলার গল্প। দ্বীনি ইলম অর্জনে তিনি গভীর মনোনিবেশ করেন। ইলম, ইখলাস ও মুজাহাদা তাঁকে পৌঁছে দেয় নতুন এক উচ্চতায়। তিনি দাওয়াহ ইলাল্লাহকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। দরস, মুহাজারা ও খুতবার মাধ্যমে তিনি খুব দ্রুত আরব তরুণদের মাঝে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
তাঁর দরদভরা আওয়াজ, আবেগাপ্লুত ভাষণ আর ইমানদীপ্ত আহ্বান কত আরব যুবককে যে আলোকিত জীবনের সন্ধান দিয়েছে তার কোনো লেখাজোখা নেই। তাঁর আবেগকম্পিত কণ্ঠস্বর শ্রোতাদের মুহূর্তেই নিয়ে যায় উপলব্ধি-দুনিয়ায়—নাড়া দেয় হৃদয়ের মর্মমূল ধরে। এ যেন কেবল উচ্চারণ নয়, মূর্তিমান অনুভূতির এক অবিরল বর্ষণ। আরব তরুণদের মাঝে শাইখের অনবদ্য দাওয়াহ কর্মসূচি আর অসাধারণ জনপ্রিয়তা তাঁকে আরব শাসকদের চক্ষুশূল করে তোলে। ২০০৫ সালে ডেনমার্কের একটি পত্রিকা প্রিয় নবি সা.-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করলে তিনি গর্জে ওঠেন। নবিপ্রেমে উদ্বেলিত শাইখের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় কালজয়ী এক ভাষণ—ইয়া উম্মাতা মুহাম্মাদ! এই অপরাধে (!) সৌদি জালিম শাসকগোষ্ঠী তাঁকে গ্রেফতার করে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি সৌদি আরবের জিন্দানখানায় অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করে সংগ্রহ করছেন অনন্ত জীবনের সোনালি পাথেয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রিয় শাইখের মুক্তি ত্বরান্বিত করুন (আমিন)।