মুহাম্মদ তাকি উসমানি (জন্ম: ৩ অক্টোবর ১৯৪৩) এস.আই., ও.আই., একজন পাকিস্তানি বিচারক; কুরআন, হাদিস, ইসলামি আইন, ইসলামি অর্থনীতি ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের একজন নেতৃস্থানীয় পণ্ডিত। তিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত ইসলামি আদর্শ পরিষদের সদস্য,১৯৮১ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত ফেডারেল শরিয়ত কোর্ট এবং ১৯৮২ থেকে ২০০২ পর্যন্ত পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরিয়ত আপিল বিভাগের বিচারক ছিলেন।২০২০ সালের জরিপে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন। ইসলামি জ্ঞানে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য তাকে শাইখুল ইসলাম উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাকে সমসাময়িক দেওবন্দ আন্দোলনের প্রধান বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তার মতামত ও ফতোয়াকে ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা সহ বিশ্বব্যাপী দেওবন্দি আলেমরা চূড়ান্ত শব্দ হিসেবে গ্রহণ করে। ২০২১ সাল থেকে তিনি পাকিস্তানের দেওবন্দি মাদ্রাসাসমূহের শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।[৮] তার পিতা শফি উসমানি ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান মুফতি, যিনি দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে সপরিবারে পাকিস্তানে চলে যান।
উসমানি দারুল উলুম করাচি, করাচি বিশ্ববিদ্যালয়, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং ১৯৬০ থেকে দারুল উলুম করাচিতে শিক্ষকতা শুরু করেন, বর্তমানে তিনি দারুল উলুম করাচির সভাপতি। তিনি ১৯৬৭ থেকে উর্দু সাময়িকী আল বালাগ এবং ১৯৭৬ থেকে ইংরেজি সাময়িকী আল বালাগ আন্তর্জাতিক সম্পাদনা করছেন। ইসলামি আইনের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে তিনি একজন কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি ওআইসির অঙ্গসংগঠন আন্তর্জাতিক ইসলামি ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্য ও সাবেক সহ-সভাপতি এবং মক্কায় অবস্থিত বিশ্ব মুসলিম লীগের সদস্য। ১৭ বছর বয়সে রচিত ইসলাম ও যুক্তির নিরিখে জন্ম নিয়ন্ত্রণ তার প্রথম গ্রন্থ। আরবি, ইংরেজি ও উর্দুতে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ১৪৩টি বইয়ের লেখক; ইসলামি অর্থনীতিতে অবদানের জন্য তিনি সর্বাধিক পরিচিত যাতে তিনি পাকিস্তান এবং বিদেশে অর্থ ও ব্যাংকিং শিল্পকে ইসলামিকরণের জন্য অগ্রণী প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ১৯৯৮ সালে তার রচিত ইসলামি অর্থায়নের ভূমিকাকে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। ইসলামি অর্থনীতিতে তার ব্যাপক কাজের ফলে তাকে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের বাহরাইন ভিত্তিক ইসলামি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য অ্যাকাউন্টিং এবং অডিটিং সংস্থার সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শরিয়া বোর্ডের সভাপতি মনোনীত হন। তিনি মিজান ব্যাংকের শরিয়া বোর্ডের সভাপতি সহ এক ডজনেরও বেশি ইসলামি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বোর্ডে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইসলামি অর্থনীতিতে অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ২০১৪ সালে তিনি ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক পুরস্কার লাভ করেন। তার তত্ত্বাবধানে মাআরিফুল কুরআনের ইংরেজি অনুবাদ সম্পন্ন হয়। তিনি ইংরেজি ও উর্দু, উভয় ভাষায় কুরআনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা রচনা করেছেন, যা দ্য নোবেল কুরআন ও তাওযীহুল কুরআন নামে প্রকাশিত। উলুমুল কুরআন সহ কুরআন অধ্যয়নে এগুলো তার প্রধান অবদান। ফিকহ শাস্ত্রে তার বিখ্যাত কাজের মধ্যে ফতোয়ায়ে উসমানী, ফিকহুল বুয়ু, ফিকহি মাকালাত, ইসলাম ও আধুনিক অর্থনৈতিক সমস্যা, বুহুস ফি কাজায়া ফিকহিয়া মুআসিরা অন্যতম। ৬ খণ্ডে সমাপ্ত সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থ তাকমিলাতু ফাতহুল মুলহিম তার সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা।তার তত্ত্বাবধানে হাদিস বিশ্বকোষ আল মুদাওয়ানাতুল জামিয়া সংকলিত হয়। হাদিস শাস্ত্রে তার অন্যান্য কাজের মধ্যে ইনআমুল বারী, দরসে তিরমিযী, হাদিসের প্রামাণ্যতা অন্যতম। জনসেবায় অবদান রাখায় ২০১৯ সালে তাকে পাকিস্তানের বেসামরিক পুরস্কার সিতারা-ই-ইমতিয়াজ প্রদান করা হয়।[] ২০১০ সালে জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ তাকে অর্ডার অব ইন্ডিপেন্ডেন্সে ভূষিত করেন। ২০২২ সালে তিনি আমেরিকান আন্তর্জাতিক আস্তিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানজনক ডক্টর অব লেটার্স পান।
info@isabahbd.com
01326344768
+01326344768
347, Concept Tower, Panthapath, Dhaka
Copyright © 2023 All rights reserved | This application is made by ZOOM IT